মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নবম শ্রেণির ছাত্র মো. তাজমুল ইসলাম শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের বিছানায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। পিঠে মারের দাগ, কালশিটে পড়েছে। হাতে-পা ও শরীরে অসংখ্য লাঠির আঘাতের চিহ্ন। তার বুকেও আঘাতের চকচকে দাগ। অসহ্য যন্ত্রণায় হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছে সে।
স্কুলছাত্র তাজমুল ইসলামকে মঙ্গলবার দুপুরে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নির্যাতিত স্কুলছাত্র তাজমুল ইসলাম ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুশঙ্গল ইউনিয়নের বাউমহল গ্রামের আব্দুল করিম খানের ছেলে। সে স্থানীয় সিদ্ধকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
বুধবার (২৫ নভেম্বর) সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুলছাত্র তাজমুল ইসলামের ওপর মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালানো হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শারীরিক দুর্বলতার কারণে তিনি উঠে বসতে পারছেন না।
নির্যাতনের শিকার তাজমুল ইসলামের পিতা চা দোকানদার আব্দুল করিম খান জানান, পরকীয়া প্রেমের মিথ্যা অভিযোগ তুলে সোমবার রাত পৌনে ৮টার দিকে কুশঙ্গল ইউনিয়নের দফাদার মো. শামীম খান, চৌকিদার কালাম, স্থানীয় জামাল সিকদার, আফজাল ও আজাদ তার ছেলেকে বাড়ি থেকে স্থানীয় সেওতা বাজারে যাওয়ার পথে ধরে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। এরপর হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে ভ্যানগাড়িতে তুলে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে তাকে মেঝেতে উপুড় করে ফের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে। একপর্যায়ে দফাদার শামীম পা দিয়ে গলা চেপে ধরে বুকের ওপর উপুর্যুপরি লাথি মারেন। ওই সময় তাজমুলের গগন বিদারী আর্তনাদ ও চিৎকারে ইউনিয়ন পরিষদের আশেপাশে বসবাসকারী অনেকে ছুটে এলেও কেউ দফাদার-চৌকিদারের নির্যাতনের থেকে তাকে রক্ষা করতে পারেনি। পরে চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে অামাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাজমুলকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার সকালে আহত তাজমুলকে হাসপাতালে নিতে গেলে চেয়ারম্যানের লোকজন তাতে বাঁধা দেয়। তারা সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে বলেন। দুপুরের দিকে তাজমুলের অবস্থা আরো খারাপ হলে চেয়ারম্যানের লোকজনের নজর এড়িয়ে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করে তাকে বরিশালে আনা হয়। পরে তাকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আব্দুল করিম খান বলেন, আমার ছেলের বয়স ১৩ বছর। সে পরকীয়া প্রেমের কি বুঝে? তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে পরিকল্পিতভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। ঘটনার দিন রাতে দফাদার শামীম খানের কাছে তাজমুলকে মারধরের কারণ জানতে চাইছিলাম। তখন তিনি জানান, চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাজমুলকে পরিষদে ধরে আনা হয়েছে।
ব্যথায় কাতর স্কুলছাত্র তাজমুল ইসলাম
জানায়, পরিষদের যখন তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় তখন দোতলার একটি কক্ষে চেয়ারম্যান আলমগীর সিকদার অবস্থান করছিলেন। পরে আমার আর্তনাদ শুনে তিনি নিচে নেমে আসেন। মুচলেকা নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেওয়ার সময় তিনি নির্যাতনের বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন।
এ ব্যাপারে জানতে দফাদার মো. শামীম খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। কিছু সময় পর তিনি মোবাইলফোন বন্ধ করে রাখেন। তবে তার প্রতিবেশীরা জানায়, ঘটনার পর তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন।
কুশঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর সিকদার বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমি নির্যাতিত ছেলেটির খোঁজখবর নিয়ে তার চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবস্থা করেছি।
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম তালুকদার বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply